ভয়/ উদ্বেগ (Fear/ Anxiety) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।

ভয় এই অনুভূতিটির সঙ্গে পরিচিত নয়, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে মানুষের এই সাধারণ অনুভূতিটি কখনো কখনো রোগের লক্ষণ হয়ে দেখা দেয়। শিশুকাল থেকেই ভয় এই অনুভূতিটির সঙ্গে পরিচিত নয়, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে মানুষের এই সাধারণ অনুভূতিটি কখনো কখনো রোগের লক্ষণ হয়ে দেখা দেয়।শিশুকাল থেকেই ভয় অনুভূতিটির সঙ্গে আমাদের পরিচিতি ঘটে। শিশুর বয়স যখন ৬-৭ মাস তখন থেকেই সে ভয় পাওয়ার অভিব্যক্তি দেখায়। স্বাভাবিক ভাবে বিকশিত হতে থাকা একটি শিশু এই সময় তার মা বা আপনজন তার চোখের আড়ালে যেতে দিতে চায় না। মা বা আপনজনকে দেখতে না পেলে কান্নাকাটি করে, বিরক্ত হয়। মা বা তার ঘনিষ্ঠজনকে খুঁজতে থাকে। ভয় অনুভূতিটার সঙ্গে এভাবেই আমাদের প্রথম পরিচয় ঘটে।

আবার শিশুর আশপাশে অপরিচিত কেউ উপস্থিত হলেও শিশুটি বিরক্ত হয়, কান্নাকাটি করে, বা আরও সোজা কথায় বলতে পারি ভয় পায়। এই পরিবর্তন গুলো ২-৩ বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিষয়গুলো শিশুর মধ্য থেকে চলে যাবার কথা। যদি না যায় তাহলেই এটাকে এসটা সমস্যা হিসেবে আমরা চিহ্নিত করতে পারি।কোনো অজানা পরিস্থিতি কিংবা যখন আমাদের নিরাপত্তাবোধ হুমকির মুখে- এ ধরনের কোনো বিষয় যখন আমাদের চিন্তায় আসে তখন আমদের শারীরিক এবং মানসিক কিছু পরিবর্তন ঘটে। বিবর্তনের ধারায় মানুষের শরীরবৃত্তীয় এবং মানসিক এই পরিবর্তন গুলোর একটি নির্দিষ্ট ধারা তৈরি হয়ে আছে। এই পরিবর্তন গুলো দিয়ে মানুষ পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক হয়, নিজের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে পারে।বিপদ আসন্ন বা খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছেএই অনুভূতিগুলো এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন সব কিছু মিলিয়েই প্রচলিত অর্থে আমরা উদ্বেগ বা ইংরেজিতে ANXIETY বলে থাকি। এবং উদ্বেগের পার্থক্য হচ্ছে প্রথমটি নির্দিষ্ট একটি চেনা পরিবেশ বা বস্তুর প্রতি হঠাৎ সতর্ক হয়ে যাওয়া আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে অচেনা, মনের ভেতরের, বিবাদমান পরিস্থিতিতে হওয়া অনির্দিষ্ট ভাবে সতর্ক হওয়ার অনুভূতি।একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করা যায়। যেমন চলন্ত গাড়ির সামনে পড়লে যে অনুভূতি তৈরি হয় তা হচ্ছে ভয় আর পরীক্ষা দিতে গিয়ে একজন ছাত্রের মনেকি হবে, কি লিখব, এই প্রশ্নের জন্য কি উত্তর এমন অনির্দিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যে অনুভূতি তা উদ্বেগ। যদিও দুটি শব্দকে কখনো কখনো সমার্থক ভাবে ব্যবহার করা যায়।অল্প মাত্রার ভয় পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের সজাগ রাখে ,আমাদের কার্যকারিতা বাড়ায়। যেমন একজন ব্যক্তি যদি তার পরের দিন অনুষ্ঠেয় চাকরির জন্য মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নিরুদ্বিগ্ন থাকেন তখন পরীক্ষার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি তিনি আর নেবেন না।সমস্যা হয় তখন, যখন অকারণে ভয়ের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় অথবা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখা যায় অথবা দুইটা ব্যাপার একই সঙ্গে ঘটে।

মানসিক রোগের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভয় জনিত বিভিন্ন মানসিক রোগ একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে। আবার বেশ কিছু মানসিক রোগের ক্ষেত্রে অন্যান্য লক্ষণের সঙ্গে ভয়ের লক্ষণটিও দেখা দিতে পারে।ভয় বা মানসিক রোগ কখন মানসিক রোগ হিসেবে গণ্য হতে পারে সেটা আলোচনার আগে ভয়ের কারণে কি কি প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সেটা বলে নেওয়া প্রয়োজন।ভয় বা উদ্বিগ্নতার জন্য যে পরিবর্তন গুলো ঘটে, তাদের আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। শারীরিক এবং মানসিক।

পরিবর্তনের মধ্যে দেখা যায় মাথা ব্যথা, মাথার ভেতর হালকা মনে হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, ঘাড় ব্যথা, মুখ শুকিয়ে আসা বা পিপাসা লাগা, কাঁপুনি, হাত-পা ঠাণ্ডা অথবা অবশ হয়ে আসা, বুক ধড়ফড় করা, হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া, শ্বাসকষ্ট, প্রস্রাব আটকে যাওয়া, পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা, পেটের ভেতর অস্বস্তি ভাব, ঘুমের ব্যঘাত ইত্যাদি।

পরিবর্তন গুলোর মধ্যে রয়েছে, মনোযোগে ব্যঘাত, সিদ্ধান্তহীনতা, অনিশ্চয়তার আশঙ্কা, মৃত্যু ভয়, স্মরণশক্তি হ্রাস, অকারণেই বিরক্ত বোধ করা, শব্দের প্রতি অতিরিক্ত স্পর্শকাতর হয়ে পড়া, অস্থিরতাসহ নানা উপসর্গ।আমাদের শরীরের স্নায়ুতন্ত্র, হরমোন, বিভিন্ন কেমিক্যালের মাধ্যমে এই পরিবর্তন গুলো আসে। স্নায়ুতন্ত্রের একটি অংশ যা স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র নামে পরিচিত তার Sympatheticঅংশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও আমাদের শৈশবের অভিজ্ঞতাও সামাজিক শিক্ষারও ভূমিকা রয়েছে।কখন এই পরিবর্তন গুলোকে মানসিক সমস্যা বলা হবে।

১। পরিবর্তন গুলো যদি কারো যে কোনো সময়ে যথাযথ কারণ ছাড়া হতে পারে
২। নির্দিষ্ট কোনো পরিবেশে বা বস্তুর ক্ষেত্রে খুব বেশি মাত্রায় হতে থাকে এবং সংশ্লিষ্ট পরিবেশ বা বস্তুকে এড়িয়ে যেতে
৩। সামাজিক ক্ষেত্রে কাজকর্ম, যোগাযোগে এই লক্ষণগুলো দেখা
৪। ব্যক্তির স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হয়।
৫। পরিস্থিতি মোকাবেলা করার প্রস্তুতি ব্যহত হয়।

খুব সংক্ষেপে এই গুলো হচ্ছে উদ্বিগ্নতা জনিত মানসিক রোগ বা Anxiety Disorders এর ধারণা।এছাড়াও গুরুতর কিছু মানসিক রোগেও অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা একটি লক্ষণ হিসেবে থাকতে পারে।

শারীরিক কিছু কারণও উদ্বিগ্নতার লক্ষণ দিয়ে প্রকাশ ঘটাতে পারে। যেমন ডায়াবেটিস রোগে রক্তের শর্করার ঘাটতি, হার্ট ফেইলিউর, থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য, ফিয়োক্রোমোসাইটমা নামের একটি রোগ কিছু ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি। সুতরাং যথাযথ সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোগগুলোর উপস্থিতি নির্ণয়করে চিকিৎসা দিতে পারলে হয়ত অনেক সমস্যারই সমাধান সম্ভব।

এই বিষয়টি আলোচনা করার কারণ এই যে, উদ্বিগ্নতা জনিত যেসব পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে সেগুলো যখন ঘটতে থাকে তখন ব্যক্তি নিজের ব্যাপারে অনেকটা বিব্রত হয়ে পড়ে। এই পরিবর্তন গুলোর শারীরিক দিকটা তার কাছে মারাত্মক রোগের লক্ষণ হিসেবে মনে হতে পারে, এই লক্ষণ গুলো যখন হতে থাকে তখন মারাত্মক কিছু ঘটতে যাচ্ছে এই আশঙ্কা তার ভয়ের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। যেমন উদ্বেগের কারণে বুক ধড়ফড় করা-এই সমস্যাটিকে যখন রোগী হৃদপিন্ডের বড় অসুখ হিসেবে দেখেন এবং প্রয়োজনীয় শারীরিক এবং ল্যাব পরীক্ষার পর হৃদপিণ্ডে কোনো সমস্যা দেখা যায় না তখন তিনি আরো ভীত হয়ে পড়েন, কেননা অনুভূতিটা তার হচ্ছে কিন্তু কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না-এই অনিশ্চয়তা আরও বেশি তার Sympathetic nervous system কে জাগিয়ে তোলে, ফলে হৃদস্পন্দন আরও বেড়ে যায়। কিন্তু এই লক্ষণটি যে উদ্বিগ্নতা বা অন্য কোনো কারণে Sympathetic nervous system কার্যকর হলে স্বাভাবিক ভাবেই দেখা দেয় সেটা জানা থাকলে এই ব্যক্তি কিন্তু ঘটনাটা খুব সহজে মোকাবেলা করতে পারতেন।

উদ্বিগ্নতা জনিত মানসিক রোগগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয় যথাযথ চিকিৎসার সুবিধার্থে। নির্দিষ্ট কোনো পরিস্থিতি বা বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত উদ্বেগ এবং সেই বস্তু বা পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়া এই বিষয়টিকে ফোবিয়াবা ভয় বলা হয়। আবার সব কিছুতেই উদ্বেগ আশঙ্কা এবং সংশ্লিষ্ট লক্ষণ থাকলে তাকে জেনারালাইজড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার ,প্যানিক ডিসঅর্ডার;সেপারেশন অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার সহ বেশ কিছু শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।দুটি কথা দিয়ে শেষ করছি- উদ্বিগ্নতা জনিত মানসিক রোগ চিকিৎসা যোগ্য। প্রথমে যথাযথ ভাবে রোগ নির্ণয় করে তারপর প্রয়োজনীয় ওষুধের পাশাপাশি সাইকোলজিক্যাল কিছু চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগটির সমাধান করে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।

সূত্র - বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম


চিকিৎসা-

Aconite Nap: রোগের হঠাৎ আক্রমণ। শিশু হঠাৎ ভয় পেয়ে কেঁপে উঠে, মৃত্যু ভয়, অস্থিরতা, বুক ধড়ফড় করা। নিজ ঘরে একা থাকতে পছন্দ, লোকজন কোলাহল অপছন্দ। ভয় পেয়ে কোন রোগের উতপত্তি। ভোগকাল সাপেক্ষে ১x-৩০ শক্তি।

Argent Nit: সর্বদা কথা বলার ইচ্ছা, সঙ্গ পছন্দনীয়। শুস্ক ক্ষীণদেহ, ক্ষয়িত মাংস, চোখ কোটরাগত। মাথার ভেতর যেন সুড়সুড় করে পোকা হাঁটতেছে। দ্রুত চলাচল করে, দ্রুত কথা বলে, উদ্বিগ্ন, উত্তেজিত, নার্ভাস।

Belladona: শিশু ভয় পেয়ে চোখ মুখ লাল, হাত-পা কাঁপে। ৩x-৬ শক্তি ফলপ্রদ।

Canabis Ind: মৃত ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখা বা মৃত ব্যক্তি নিয়ে ভয়ের কোন স্বপ্ন দর্শণ। মনে করে সে পাগল হবে, অনবরত মাথা নাড়ে, কথা বলে। কথা বলতে বলতে ভুলে যায়, গুছিয়ে বলতে পারেনা। ৩০-২০০ শক্তি উপকারী।

Kali Brom: ঘুমের ঘোরে শিশু আঁতকে উঠে কাঁদতে থাকে, শরীর কাঁপে। লেখাপড়া বা বিজনেজ সংক্রান্ত মানসিক পরিশ্রম থেকে উদ্বেগ, ফোবিয়া। মস্তিস্ক শূণ্য ভাব, মাথার ভেতর যেন সুড়সুড় করে পোকা হাঁটতেছে এমন অনুভব, ক্ষুধা লোপ, অনিদ্রা,স্মরণশক্তি হ্রাস। ২০০-১এম শক্তি প্রযোজ্য।

Opium: ভূত প্রেতের ভয় কিংবা অদৃশ্য কাল্পনিক বস্তু দেখে ভয় পেয়ে কোন রোগের সূত্রপাত। ৩০-২০০ শক্তি।

Arsenic Album: মৃত্যু ভয়, একলা থাকতে পারেনা। ৩০- পর্যায়ক্রমে উচ্চশক্তি।

Chloral Hydrate: শিশু ঘুম থেকে ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠে।

বায়োকেমিকঃ
Kali Phos: নিদ্রাকালে বিভিন্ন স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়ে আঁতকে উঠে। ১২x শক্তি।




Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন