এটি খুবই কমন একটি অসুখ। মেয়েরা ৫ থেকে শুরু করে ৬০ বছর বয়সের যে কোন সময় এই সমস্যায় পড়তে পারে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে প্রত্যেক ৪ জন মহিলার মধ্যে ৩ জনেরই জীবনের কোন না কোন সময় একবার হলেও এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাই এর গুরুত্বও কম নয়। চলুন আজ এই অসুখটি সম্পর্কে জানি।
কারণঃ
কোন অসুখ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের আগে আমাদের জানতে হবে অসুখটার কারণ কি? কেননা কারণ জানলে অসুখ মোকাবেলা সহজ হয়। যোনিতে অনেক কারণে চুলকানি হতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কারণসমূহ হলো -
০১. ঈস্ট বা ছত্রাকের আক্রমনঃ
এটি যৌনাঙ্গের চুলকানি বা ইচিং হওয়ার অন্যতম কারণ। সাধারণত Candida Albicans, এই ছত্রাকের কারণে যোনিতে চুলকানি হয়। এই ছত্রাক নরমালি মেয়েদের যৌনাঙ্গে পরজীবী হিসেবে থাকে। কিছু ল্যাকলোব্যাসিলাস নামে উপকারী ব্যাকটেরিয়া এই ছত্রাকের বংশবিস্তারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু এন্টিবায়োটিক খেলে, গর্ভাবস্থায়, দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকলে, হরমোনাল ইমব্যালেন্স থাকলে ও খাদ্যাভাসের কারণে এই উপকারী ব্যাকটেরিয়া মরে যায়, ফলে ঈস্টগুলো তাদের জন্মের জন্য অনুকূল পরিবেশ পায়। এর কারণে যোনিতে ইনফেকশন হয়।
উপসর্গ:
- যোনি পথ দিয়ে ঘন, সাদা তরলের নির্গমন হয়।
- চুলকানি, ব্যথা ও প্রদাহ হয়।
- যৌন মিলনের সময় ব্যথ্যা হয়।
০২.ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিসের সংক্রমণঃ
এটি ভ্যাজাইনা বা যোনিতে চুলকানি হওয়ার অন্যতম কারণ। যোনিতে নরমালি কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে। যখন কোন কারণে এই ব্যাকটেরিয়া গুলোর অনেক বেশি বংশবিস্তার ঘটে তখন যোনিতে ইনফেকশন হয়।
উপসর্গঃ
- গন্ধযুক্ত ও মাছের আশঁটে গন্ধযুক্ত তরল নির্গত হয় যোনি দিয়ে।
- চুলকানি হয় প্রচুর।
- প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া হওয়া।
০৩.ট্রাইকোমোনিয়াসিস এর আক্রমণঃ
এটি একটি প্যারাসাইট। এটির আক্রমণে যোনিতে চুলকানি হয়।
উপসর্গ:
- হলুদ, সবুজ রঙের ও খুব তীব্র বাজে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব হয়।
- তলপেটে ব্যথ্যা হয়।
- যোনিতে চুলকানি হয়।
০৪. এছাড়াও যৌনাঙ্গে উকুন, খোসপাচড়া ও মাইকোপ্লাজমা জেনেটালিয়াম এর সংক্রমণ হলে যোনিতে চুলকানি হয়।
০৫. কিছু সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ যেমন – সিফিলিস, গনোরিয়া, এইডস ইত্যাদির কারণে যৌনাঙ্গে ইচিং বা চুলকানি হতে পারে।
০৬. বিভিন্ন বিরক্তিকর পদার্থ যেমন – বিভিন্ন ডিটারজেন্ট, কেমিক্যাল, সুগন্ধিযুক্ত সাবান, রঙ ওয়ালা টিশ্যু পেপার, ফেমিনিন হাইজেনিক স্প্রে, ডুশ ব্যবহার করলে যোনিতে চুলকানি হতে পারে।
০৭. মেনোপোজের পর মহিলাদের ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন কমে যায়। ফলে যোনি শুকিয়ে যায়। এর ফলে বিভিন্ন পরজীবীর সংক্রমণ হয়। ফলে যোনিতে ইচিং হয় ।
০৮. ডায়াবেটিস, রেনাল ডিজিজ, একজিমা ও রক্তে কোন রোগ থাকলে ও অন্যান্য কোন রোগ থাকলেও যৌনাঙ্গে চুলকানি হয়।
০৯. মাসিকের সময়, অস্বাস্থ্যকর প্যাড ও কাপড় ব্যবহার করলে।
১০. যৌনকর্মীদের এই রোগগুলো বেশি হয়। তাই অবাধ যৌন আচরণের কারণে হয়ে থাকে।
১১. যৌনাঙ্গ সবসময় গরম ও আর্দ্র রাখলে।
১২. অপরিষ্কার থাকলে।
প্রতিরোধঃ
বলা হয়ে থাকে যে কোন অসুখ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করাই বেশি ভাল। সুতরাং এই রোগটি যাতে আপনার না হয় তাই আগেই সাবধান থাকুন ও নিচের কথাগুলো মেনে চলুন।
০১. রঙীন ও বেশি সুগন্ধিযুক্ত টয়লেট টিশ্যু ও সাবান যৌনাঙ্গে ব্যবহার করবেন না।
০২. ফেমিনিন হাইজিন স্প্রে ও ডুশ ব্যবহার করবেন না।
০৩. ভেজা কাপড় পরে বেশিক্ষণ থাকবেন না। গোসল বা ব্যায়ামের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভেজা কাপড়টি পাল্টে নিবেন। যারা সুইমিং পুলে সাঁতার কাটেন তাদের ক্লোরিনের কারণেও ইচিং হতে পারে, তাই সাবধান হন।
০৪. আপনার যৌনাঙ্গ পরিষ্কার রাখুন সবসময়। আর প্রসাব বা পায়খানা করার সময় হাত দিয়ে সামনে থেকে পেছনে এই নিয়মে পরিষ্কার করতে হবে। খেয়াল রাখবেন পায়খানার রাস্তার জীবাণু যেন যোনিতে না লাগে।
০৫. দই খান, এতে ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে।
০৬. সুতির কাপড় দিয়ে তৈরি অন্তর্বাস বা পেন্টি পরুন। সিনথেটিক পেন্টি পরবেন না।
০৭. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
০৮. ওজন কমান।
০৯. সহবাসের সময় কনডম ব্যবহার করুন।
১০. যোনি আর্দ্র ও ভেজা রাখবেন না।
১১. মাসিকের সময় নোংরা কাপড় ব্যবহার করবেন না। পরিষ্কার প্যাড ব্যবহার করুন।
১২. সহবাসের পর যৌনাঙ্গ ভাল ভাবে পরিষ্কার করুন। ধুয়ে ফেলুন।
১৩. সহবাসের পর প্রসাব করুন।
১৪. একাধিক ব্যক্তির সাথে যৌন সহবাস পরিত্যাগ করুন।
১৫. নিয়মিত গোসল করুন।
এই অসুখটি হলে অবশ্যই একজন গাইনোকোলজিস্ট বা একজন ডার্মাটোলজিস্ট বা চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান। অবহেলা করবেন না বা লজ্জা পাবেন না। কারণ এর ফলে পরবর্তীতে আরও খারাপ কিছু হতে পারে।
চিকিৎসা-
Caladium Seg: গর্ভাবস্থায় বা গর্ভস্রাবের পর যোনিদ্বারে অত্যাধিক চুলকানি। নিম্ন থেকে পর্যায়ক্রমে উচ্চশক্তি।
Graphities: স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ে অসহনীয় চুলকানি, ছোট ছোট উদ্ভেদ থেকে আঠালো রস নির্গমন। যোনিকপাট ফোলে যায়। ২০০- ১এম শক্তি।
Mezerium: স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ে চুলকানির জন্য উৎকৃষ্ট ঔষধ। অত্যাধিক চুলকানির পর জ্বালা। ২০০-১এম শক্তি প্রযোজ্য।
Ambragrasia: গর্ভাবস্থায় চুলকানী, ব্যথা,ফোলা। ৩০-২০০ শক্তি উপকারী।
Radium Brom: স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ে চুলকানির পর রস ঝরে, ত্বক মোটা হয়ে যায়। ৩০-২০০ শক্তি।
Sepea: স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ে চুলকানির শ্রেষ্ঠ ঔষধ। ৩০-২০০ শক্তি সেব্য। এবং Q শক্তি নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার্য।
বায়োকেমিকঃ
Kali Mur, Silicea.6x-12x এক্ষেত্রে কার্যকরী।
BP-20
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন