শয্যামূত্র (Bed Urination) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।

শয্যামূত্র (Bed Urination) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।
শিশুদের বিছানায় প্রস্রাব করা সমস্যা নিরাময়ে হোমিওপ্যাথিক ওষধের প্রয়োগ সংকেত নিয়ে আজকের আলোচনা।

শিশুদের বিছানায় প্রস্রাব করা সমস্যাটিকে ডাক্তারি পরিভাষায় নকচারনাল এনুরেসিস বলে। সাধারণত শিশুরা জন্মের পর দু’তিন বছর পর্যন্ত ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে থাকে। এটি কোন রোগ নয়। এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যেহেতু আড়াই বছর বয়সের স্নায়ুতন্ত্রের পরিপক্কতা আসে না, তাই প্রস্রাব ও পায়খানা ধারণ করার ক্ষমতা মস্তিষ্ক দ্বারা সু-নিয়ন্ত্রণ হয়না। স্বাভাবিক অবস্থায় তিন বছর পর বিছানায় প্রস্রাব করার কথা নয়। বংশগত কারণে মূত্রথলির নিয়ন্ত্রণ দেরিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এমন সমস্যা হতে পারে।

বিশেষ করে, যুবক বয়সে এই সমস্যা যাদের রয়েছে, তারা বেশ বিব্রতকর অবস্থায় থাকেন। রোগী নিজের কাছে, পরিবারের কাছে ও সমাজের কাছে হীনমন্যতায় ভুগতে পারে। ফলে বিভিন্ন ধরনের মানসিক উপসর্গ যেমন হৃদকম্পন, ব্যথা অনুভব, ঘুমের অসুবিধা বা ঘুম ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি।

এই রোগের সঠিক কারণ এখনো পর্যন্ত নির্ণিত হয়নি। তবে ধারনা করা হয় যে, স্বাভাবিক অবস্থায় দু’তিন বছর বয়স পর্যন্ত দেহের মেরুদন্ডের কোমরের অংশের স্নায়ুতন্ত্র সেকরাম পাক্সস প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করে। তাই তখন প্রস্রাব ঘন ঘন হয় এবং সত্যিকার কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তিন বছরের পর মস্তিস্ক মূল অংশ বা সেরিব্রাল কটেক্সের নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে প্রস্রাবের প্রক্রিয়াটিও কারো নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। আর এই প্রক্রিয়া যদি দেরিতে হয় বা কোনো কারণে এর নিয়ন্ত্রন স্নায়ুসন্ধিতেই বিদ্যমান থাকে, তখনই বিছানায় প্রস্রাব উপসর্গ দেখা দেয়।

তবে আশার কথা হচ্ছে এই যে, এ ধরনের রোগিদের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উপসর্গটি প্রায়ক্ষেত্রেই চলে যায়। কিছু ক্ষেত্রে কারো কারো বেলায় নিম্নের কারণগুলো লক্ষ্য করা যায়।

প্রথমতঃ ঘুমের সময় প্রস্রাব না করে ঘুমাতে গেল বা রাতে প্রস্রাবের বেগ অনুভূত হলে আলসেমি করে বাথরুমে প্রস্রাব না করা।

দ্বিতীয়ত : প্রস্রাব প্রণালীতে দীর্ঘ মেয়াদি ইনফেকশন থাকলে এ সমস্যা থাকতে পারে। তবে পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের এ রোগ বেশি হয়।

তৃতীয়ত : মূত্র সংবহনতন্ত্রের গঠনের যদি কোনা বিকৃতি থাকে। যেমন- ক্ষুদ্রাকৃতি কিডনি, একের অধিক বৃক্কনালী বা ইউরেটার ও মূত্রথলির নিচের ভাগ নিয়মিতকাজ না করা ।

চতুর্থত : অনেক সময় অধিক প্রস্রাব হয়, তখন রোগ যেমন কিডনি ফেইলর, হার্টফেইল্যুর ও প্রস্রাব বর্ধক ওষুধ ব্যবহার ইত্যাদিতেও বিছানায় হতে পারে।

পঞ্চমত : মূত্রথলির স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যার কারণেও প্রস্রাব বেশি হতে পারে। যার ফলে মূত্রথলির ওভার লোডও হতে পারে।

ষষ্ঠত : মানসিক চাপ ও উদ্বেগ তিন থেকে চার বছরের মধ্যে শিশুরা যদি কোনও বিশেষ মানসিক আঘাত পায়।

সপ্তমত: হরমোন ক্ষরনের অসামজ্ঞস্য- এতে এদের অ্যান্টি ইউরেটিক হরমোন এডিএইচ রাতে কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকের তুলনায় রাতে বেশি প্রস্রাব তৈরি হয়।

হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান:- শিশু ও বয়স্কদের বিছানায় প্রস্রাব নিরাময়ে হোমিওপ্যাথিতে অত্যন্ত কার্যকরী ওষুধ আছে। যা অন্যপ্যাথিতে নেই। লক্ষণভেদে যে ওষুধ বেশি ব্যবহৃত হয় তা হলো- ১. সিনা ২. এসিড ফস ৩. কষ্টিকাম ৪. ক্রিয়োজট ৫. সাইলিসিয়া ৬. মেডোরিনাম ৭. সিফিলিনাম ৮. ইউরেনিয়াম নাইট্রিকাম ৯. আর্জেন্টনাট্রিকাম উল্লেখযোগ্য।

চিকিৎসা-

Cina: কৃমিগ্রস্থ বালক বালিকার বিছানায় প্রস্রাব, হাঁটা-চলা উঠা-বসার মাঝে ফোটা ফোটা প্রস্রাব ঝরে। ২০০ শক্তি উপকারী।

Cousticum: ঘুমের মাঝে বিছানায় প্রস্রাবে ফলপ্রদ। ৩০-২০০ শক্তি।

Acid Phos: স্নায়বিক দুর্বলতা, অধিক পিপাসা এবং বারংবার প্রস্রাব। ৩০-২০০ শক্তি ফলপ্রদ।

Acid Benz: প্রস্রাবে তীব্র দুর্গন্ধ। ২০০ শক্তি উত্তম।

Kreasote: দাঁতের পীড়াগ্রস্থ বালক বালিকা। ৩০-২০০ শক্তি।

এছাড়াও সাইলিসিয়া, মেডোরিনাম, সিফিলিনাম, ইউরেনিয়াম নাইট্রিকাম, আর্জেন্টনাট্রিকাম এপোসাইনাম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

বায়োকেমিক- Nat.Phos 3x শক্তি সেব্য। 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন