ধনুষ্টঙ্কার (Tetanus) এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।

টিটেনাস বা ধনুষ্টংকার রোগ একটি ঘাতক ব্যাধি এতে কোনও সন্দেহ নেই। এ রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়ে। আমাদের দেশে প্রতিবছর গড়ে বিশ থেকে পঁচিশ হাজার লোক শুধু এ-রোগে আক্রান্ত হয়েই মারা যায়। ধনুষ্টংকার হয় Clostridium tetani নামক ব্যাকটেরিয়া দিয়ে। এই ব্যাকটেরিয়াটি এক ধরনের স্পোর তৈরীকারী এনেরবিক ব্যাকটেরিয়া। অর্থাৎ এটি বংশবৃদ্ধি করে অক্সিজেন শূণ্য মাধ্যমে (এনেরবিক) এবং এটি স্পোর তৈরী করতে পারে। এ কারণে এটি আমাদের শরীরের আঘাত প্রাপ্ত জায়গায়, যেখানে কলা (টিস্যু) ধ্বংস হচ্ছে, সেখানে বংশবৃদ্ধি করে। আঘাত প্রাপ্ত স্থানে কোষ ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায় অথবা অন্যান্য এরবিক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে অক্সিজেন শূণ্য পরিবেশ তৈরী হয়। Clostridium tetani যখন আমাদের শরীরে আক্রমন করে তখন এক বিশেষ ধরনের টক্সিন (বিষ জাতীয় পদার্থ) তৈরী করে। উক্ত টক্সিন আমাদের শরীরের রক্তের মধ্য দিয়ে ঢুকে স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে। আর যেহেতু আমাদের শরীরের মাংসপেশী স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সংযুক্ত, মাংশপেশী শক্ত হয়ে যায়। এ রোগে রোগীর মুখমণ্ডল, ঘাড় ও পিঠের মাংসপেশী শক্ত হয়ে যায়। ফলে রোগী মুখ খুলতে পারে না এবং ঘাড় নাড়াতে পারে না। পিঠ বাঁকা হয়ে ধনুকের মত হয়ে যায়। মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত রোগীদের খিঁচুনীও হতে পারে।

লক্ষণ: এ রোগের জীবাণু এক থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। প্রথম দিকে ঘাড়, শরীরের পেছন দিক এবং পেটে ব্যথা হতে পারে। জ্বর থাকতে পারে। মাংসপেশি গুলো সংকুচিত হতে থাকে এবং প্রচণ্ড খিঁচুনি হতে পারে। মুখের মাংসপেশিগুলো শক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে হাঁ করতে অসুবিধা হয়। শরীরের পেছনের মাংসপেশিগুলো সংকুচিত হয় বলে পুরো শরীর ধনুকের মতো বেঁকে যায়। যেকোনো ব্যথা, শব্দ, আলো ইত্যাদির কারণে খিঁচুনি আরম্ভ হয় এবং ৩-৪ মিনিট স্থায়ী হয়। শ্বাসকষ্ট হয় এবং রোগী ঢোক গিলতেও পারে না। শরীরের কাটা জায়গা, যার মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে, সেখানে ইনফেকশন হতে পারে।

Arnica Mont: আঘাত জনিত ধনুষ্টঙ্কারে উপকারী। পরবর্তীতে Physostigma. ২০০ শক্তি।

Belladona: নবজাতকের ধনুষ্টঙ্কার। শিশুর গায়ের রঙ পরিবর্তনশীল। হাত-পা খিঁচুনি, দাঁত লাগা। ৩x-৬ শক্তি ফলপ্রদ।

Hypericum: হাত-পা আঙুল বা শরীরের কোন স্থান কেটে, ফেটে বা পিন পেরেক স্নায়ুতে বিদ্ধ হয়ে ধনুষ্টঙ্কার হওয়ার উপক্রম হলে। শিশুর নাভি কাটার পর সহজে না শুকিয়ে ধনুষ্টঙ্কার হওয়ার উপক্রম। ৩০-২০০ শক্তি উপকারী। Q শক্তি ব্যবহার্য।

Amyl Nit: ঘন ঘন খিঁচুনি, রোগী ধনুকের মত পেছনে বেঁকে যায়। পানাহার বন্ধ। ৩-৬ শক্তি সেব্য এবং Q শক্তি ঘ্রাণ নিতে হয়।

Cicuta Virosa: মস্তকে বা মেরুদন্ডে আঘাত লাগা থেকে ধনুষ্টঙ্কার, ঘন ঘন খিঁচুনি, রোগী ধনুকের মত পেছনে বেঁকে যায়। মুখ দিয়ে রক্তাক্ত ফেনা বের হয়। রোগী সম্পূর্ণ অচৈতন্য হয়ে পড়ে থাকে। ৩০-২০০ শক্তি ফলপ্রদ।

Cumrum Met: বৃদ্ধাঙ্গুল মুষ্ঠিবদ্ধ করে খিঁচুনি, মুখ নীল বর্ণ ধারণ করে, পান করার সময় গলায় গড়গড় শব্দ হয়। ৬-৩০ শক্তি ঘন ঘন সেব্য।

Passiflora Inc: প্রসবের পর মা অথবা শিশুর খিঁচুনি কান্না বা ধনুষ্টঙ্কারের মত আক্ষেপ, শিশু মায়ের দুধ খেতে চায়না। নানা রঙ ধারণ করে। এছাড়া কৃমি জনিত খিঁচুনিতে সেব্য। Qশক্তি উপকারী।


বায়োকেমিকঃ
Mag.Phos, Kali Mur, Nat.Phos 3x-6x ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যায়।




নবীনতর পূর্বতন